রোগের লক্ষণসমূহ
ওয়াটার ফাউলকে এভিয়ান ফ্লু’র প্রাকৃতিক বাহক বা আধার হিসেবে গণ্য করা হয়। সাধারণত বেশির ভাগ সাবটাইপ বন্য পাখিতে সামান্য বা কোনো রোগ সৃষ্টি করে না। হাইলি প্যাথজেনিক ঐ৫ঘ১ এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা স্ট্রেইন বিভিন্ন বন্য পাখিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটাচ্ছে। তীক্ষ্ম নজরদারীর মাধ্যমে কোনো বন্য পাখি অসুস্থ না হয়ে কিংবা মারা না যেয়েও এই রোগের পোষক হয়ে ও বিস্তারে কোনো ভূমিকা পালন করছে কি না সে বিষয়ে জানার প্রয়োজন আছে।
মুরগি ও বন্য পাখিতে H5N1 এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার নিম্নোক্ত লক্ষণ থাকতে পারেঃ
* আকষ্মিক মৃত্যু
* পাতলা পায়খানা
* হাঁচি ও কাশি
* অজ্ঞাত কারণে শুকিয়ে যাওয়া
* উন্মুক্ত ক্ষত
* মুখ, নাক, কান ও মলদ্বার হতে স্বচ্ছ অথবা ঘোলাটে পদার্থ নিঃসরণ।
* মুখের টিস্যু অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া অথবা/ এবং রক্তিম হওয়া (অক্ষিঝিল্লিসহ)।
* পালকের গোড়া কুচকে যাওয়া, গোড়ায় রক্ত, পালকে তৈলাক্ত আস্তরণ।
* আচরণগত অস্বাভাবিকতা ঃ পড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরানো, মাথা ও ঘাড় মোচড়ানো, পক্ষাঘাত, খিঁচুনী।
* চলনে অস্বাভাবিকতাঃ পূর্বের কোনো আঘাত বা ক্ষত না থাকা সত্ত্বেও দাঁড়াতে না পারা ও ডানা ঝাপটানো
* গণহারে অথবা গুচ্ছাকারে বন্যপাখির মৃত্যু (প্রজাতির প্রাকৃতিক ইতিহাস বিবেচনায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হার)
জীবিত পাখি হাত দিয়ে নাড়াচাড়া
সুস্থ ও মরণাপন্ন পাখি পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সবসময়ই প্রথমে অসুস্থ ও তারপর মৃত পাখি পরীক্ষা করতে হবে।
বন্য পাখি ধরা এবং নমুনা সংগ্রহের পরিকল্পনা করার পূর্বে স্থানীয় সরকার, বন্য প্রাণীর পার্ক বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়কের সাথে যোগাযোগ করে জানতে হবে একাজের জন্য পূর্বানুমতির প্রয়োজন আছে কি না। অসুস্থ বন্য পাখি নাড়াচাড়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে। মুক্তভাবে বিচরণকারী পাখি বিভিন্ন উপায় যেমন জাল, ফাঁদ, বা স্পটলাইটিং এর মাধ্যমে ধরা যেতে পারে। যদি রোগের প্রাদুর্ভাব না ঘটে বা কোনো অসুস্থ বা মৃত পাখি যদি না পাওয়া যায় তবে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্য কোনো সংক্রামক রোগের নজরদারীর জন্য নমুনা হিসেবে জীবিত সুস্থ পাখি সংগ্রহ করতে হবে।
যদি মুক্তভাবে বিচরণকারী (অল্প/ অধিক) বন্য প্রাণীতে বর্ণিত কোনো লক্ষণ দেখা যায় তবে অবিলম্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট বন্য প্রাণীর কর্তৃপক্ষ, পশুপাখির সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান অথবা এর প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জনসাধারণের কাছ থেকে বন্য প্রাণীর অসুস্থতার খবর প্রায়শই কোনো ব্যাপক মৃত্যুর পূর্বাভাস হয়ে থাকে। একটি নতুন এলাকার অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় এনে H5N1 প্রাদুর্ভাব প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করাই সব থেকে ভালো। তা করলে কৃষি খামার এবং বন্য প্রাণীতে এ ভাইরাসের সম্ভাব্য বিস্তার রোধের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব এবং এধরনের ব্যবস্থা একটি বড় প্রাদুর্ভাবকে মোকাবেলা করতে অর্থনৈতিক দিক থেকে সহায়তা করে।
চিড়িয়াখানা, বন্য জীব রক্ষাস্থান এবং চিকিৎসা কেন্দ্র যেখানে পাখি বাহিরে রাখা হয় সেখানকার ব্যবস্থাপকদেরও রোগ লক্ষণের ওপর পরামর্শ দিতে হবে যাতে তাঁরা তাঁদের পাখিকে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারেন। যদি এ ধরনের কোনো রকম লক্ষণ পাখিতে দেখা দেয় তাহলে খুব দ্রুত অসুস্থ পাখিগুলোকে প্রধান বাসস্থান হতে আলাদা করতে হবে এবং প্রাণিচিকিৎসক দ্বারা তাড়াতাড়ি সেগুলোকে পরীক্ষা করাতে হবে এবং সকল তথ্য ও নমুনা সঠিক পদ্ধতি অনুসারে সংগ্রহ করে নিকটস্থ সরকারি ভেটেরিনারি সংস্থার নিকট প্রেরণ করতে হবে। প্রাণীর আলোকচিত্র এবং/ অথবা ভিডিও (জীবিত অবস্থায় রোগ লক্ষণ এবং মৃত) অনেক সময় বন্য প্রাণীতে রোগ অনুসন্ধানে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
যদি এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে অসুস্থ বা আহত পাখি গ্রহণ করে যাদের মধ্যে বর্ণিত রোগ লক্ষণ দেখা গেছে তাহলে তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে আলাদা করতে হবে যাতে এদের থেকে কোনো রোগ জীবাণু অন্য পাখিতে না ছড়ায়। যাঁরা প্রথমে রোগটির বিষয়ে জানিয়েছেন তাদেরকে আর কোনো পাখি অসুস্থ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে হবে। এর মাধ্যমে ওই এলাকায় কোনো বড় ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব চলছে কিনা তা জানা যাবে। আবদ্ধ পাখি অসুস্থ হলে অথবা সাধারণ জনসাধারণ এ প্রতিষ্ঠানসমূহে কোনো অসুস্থ পাখি আনলে সরকারি প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে অবহিত করতে হবে যাতে তারা কোন প্রজাতি আক্রান্ত হচ্ছে এবং কী ধরনের রোগ লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে তার রেকর্ড রাখতে পারে।
মোট কথা
এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা/ বার্ড ফ্লু-এর প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে মৃত পাখির অপসারণ পর্যন্ত কঠোর জীবনিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জীবনিরাপত্তা পক্ষান্তরে খরচ বাঁচায়। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে সব দিকে নজরদারী বাড়াতে হবে।